সন্দেহের অবকাশ নেই যে, আল্লাহর শেষ আসমানী গ্রন্থ আল কুরআন তার মূলপাঠ্যসহ সকল দিক থেকে সুরক্ষিত আছে। এই মর্যাদা অন্য কোনো ঐশ্বরিক ধর্মের অধিকারে নেই। কুরআনের পূর্ববর্তী অগণিত ধর্মগ্রন্থ এবং বিশেষ গ্রন্থত্রয়ের মূলপাঠ্য (টেক্সট) হারিয়ে গেছে। এসব ধর্মের নিজস্ব পরম্পরা অনুযায়ী এখন ধর্মগ্রন্থের যা কিছু অবশিষ্ট আছে, তা বিবর্তনের ধারার চলমান রূপায়ন। যা একধরনের আর্কাইভের সংগ্রহ বটে। কিন্তু পবিত্র কুরআন বিবর্তনের কোনো পথ পাড়ি দেয়নি। একেবারে প্রথমে যেমন, আজও তেমনি এ মহাগ্রন্থ অগুনতি হাফিজের বক্ষে সুরক্ষিত। প্রায় চৌদ্দ শত বছর আগের আল কুরআনের লিখিত পাণ্ডুলিপি এখনো বিদ্যমান। বিশ্বের বিভিন্ন জাদুঘর, সরকারি লাইব্রেরি, ধর্মীয় বিদ্যালয় এবং ব্যক্তিগত আর্কাইভগুলোতে বিভিন্ন শতাব্দী এবং সময়কালে লেখা, কমপক্ষে দুই লক্ষেরও বেশি কপি মওজুদ রয়েছে। এতে একটি শব্দ বা বর্ণেরও ভিন্নতা নেই। কুরআন যেমন নাযিল হয়েছিল, তেমনি আছে আজও। সময়ের পরিক্রমায় পবিত্র কুরআন সম্পর্কিত বহু সংখ্যক উলূম তথা জ্ঞানশাস্ত্রের জন্ম হয়েছে। কুরআনিক জ্ঞানকলায় একালে যুক্ত হয়েছে নতুন এক বিষয়, যাকে আতলাসুল কুরআন বা কুরআনের ভূগোল আখ্যা দেওয়া হয়। বিংশ শতাব্দীর শেষাবধি কুরআনের ভূগোল, নবীদের আলোচনা, কুরআনসংশ্লিষ্ট স্থান এবং ব্যক্তিবর্গ এর নামে প্রচুরসংখ্যক বই রচিত হয়েছে। বিশ্বসভ্যতার তৃতীয় সহস্রাব্দে নতুন এই জ্ঞানকলা কুরআন—বোঝার একটি নতুন ধারা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কুরআনে বিভিন্ন স্থান, ব্যক্তিবর্গ এবং জাতিগোষ্ঠীর উল্লেখ হয়েছে, প্রথমবারের মতো মানচিত্র ও নকশার মাধ্যমে সেগুলো তুলে ধরার সফল চেষ্টা করা হয়েছে। ধর্মীয় গ্রন্থাদির ব্যাখ্যা—বিশ্লেষণের জন্যে ওল্ড এবং নিউ টেস্টামেন্টে প্রাচ্যবিদরা যে কাজ করেছেন, তা জ্ঞান ও গবেষণার উপযোগিতায় উল্লেখযোগ্য। তাওরাতে বা ইঞ্জিল চতুষ্টয়ে যে স্থান ও ব্যক্তিবর্গের আলোচনা রয়েছে, তা এক ডজনেরও বেশি ভৌগোলিক মানচিত্রের বইয়ে সুন্দরভাবে স্থান পেয়েছে। যেগুলোকে অ্যাটলাস (অঃষধং) বলা হয়। অপরদিকে কুরআন মজিদের বিভিন্ন সূরায় আরব ও হিজাজের যেসব জাতি, স্থান, ব্যক্তিত্ব, মহাসাগর, নদী, উপসাগর, হ্রদ, পর্বত, মরুভূমি, গুহা, শহর এবং জনবসতির উল্লেখ রয়েছে, সেগুলো শত শত লেখকের দ্বারা বিশদভাবে অধিত হয়েছে এবং এর উপর রচিত হয়েছে মূল্যবান বহু গ্রন্থ। কিন্তু এই তথ্যগুলোকে মানচিত্র বা নকশার সাহায্যে উপস্থাপন করার জন্য কোনো মৌলিক প্রয়াস আমাদের সামনে ছিল না, ফলস্বরূপ যখন একজন কুরআন—পাঠক কুরআনে উল্লেখিত স্থানগুলোকে পাঠ করেন এবং দেখেন, তখন তার মনের মধ্যে স্থির ও স্বচ্ছ কোনো ধারণা প্রতিফলিত হয় না। আমরা স্বীকার করি যে, মুসলিম গবেষক ও আলিমগণের হাতে আরব ও হিজাজের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সভ্যতার উপর বহু মৌলিক গ্রন্থ লেখা হয়েছে। ওবায়েদ বিন শারিয়ার কিতাব আল—মুলুক ওয়া আখবার আল—মাযিয়ীন, আবু উবাইদার “কিতাবুল মাগাজাত”, মুবাররাদের “কিতাবু আয়্যামি বানি মাজিন, নাসাবু কাহতান ওয়া আদনান”, হিশাম কালবির বিভিন্ন কিতাব, ইবনে হিশামের আল—সিরাত আল—নববিয়্যাহ। ইবনুল হিশাম হামদানীর “সিফাতু জাজিরাতু আল—আরব”, এবং “আকলিল”, ইবনে ইসহাকের কিতাবুস সীরাত, আবু ওয়ালিদ আজরাকির মাক্কাহ, ইবনে কুতায়বার কিতাব আল—মাআরিফ, আবু জাফর আল—তাবারির তারিখুর রুসুল ওয়াল আম্বিয়া, মাসুদির “মুরুযুয যাহাব”, আবুল ফিদার আল মুখতাসার ফি আখবারিল বাশার, ইবনে খালদুনের “কিতাবুল ইবার” ইবনে আসাকিরের তারিখু দিমাশকসহ বহুবিধ উপকারী গ্রন্থ রচিত হয়েছে, যাতে কুরআনে উল্লেখিত স্থান, ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে দরকারী তথ্য উপস্থিত রয়েছে। এভাবে ভূগোল ও ইতিহাসের উপর হিশাম বিন মুহাম্মদ কালবি, আবু সাঈদ আল—আসমাঈ, সা’দান ইবনে মুবারক, আবু সাঈদ হাসান আল—সুকরি, উমর বিন রিস্তা, আবু জায়েদ বলখি, আবু সাঈদ আল—সাইরাফি, হাসান বিন মুহাম্মদ আল—মারুফ, মাহমুদ বিন উমর আয যামাখশারি, আল—বাকরী, ইমাম সুয়ূতী, ইবনে ফকিহ হামদানী, ইবনে মারদুইয়া, ইবনে হাওকল, মাকদিসি, ঈদ্রিসি, ইয়াকুত হামাভি, জাকারিয়্যা কাজভিনি এবং শামস—উদ—দীন দিমাশকি’র মতো পণ্ডিতগণ খুব দরকারী জ্ঞানভাণ্ডার রেখে গেছেন। ইদ্রিসির তৈরিকৃত পৃথিবীর মানচিত্র আজও বিস্ময় সৃষ্টি করে এবং আধুনিক মানচিত্রসমূহের জননী হিসেবে নিজের প্রাপ্য সম্মান দাবি করে। আল—বিরুনীর “আল—আসারুল বাকিয়াহ আনিল কুরূনি আল—খালিয়াত”ও খুব দরকারী তথ্য সরবরাহ করে। কোনো না কোনোভাবে এসব বইয়ের সেই উপযোগিতা রয়েছে, যা কুরআনের স্থান, জাতি ও ব্যক্তিবর্গ অধ্যয়ন ও উপলব্ধির ক্ষেত্রে দারুণ সহায়ক হতে পারে।
Tk.
360
252
Tk.
380
228
Tk.
700
350
Tk.
180
108
Tk.
260
143
Tk.
160
88
Tk.
100
82
Tk.
70
49
Tk.
140
95
Tk.
500
455