মুখবন্ধ ২০২০ সালের শুরুতে করোনা মহামারির ঢেউ বিশ্বব্যাপী আছড়ে পড়ে। ৮ই মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ২৬শে মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের মধ্য দিয়ে মানুষের ঘরবন্দি জীবন শুরু হয়। কিন্তু ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামসহ চিকিৎসা সামগ্রীর তীব্র অভাব থাকা সত্তেও চিকিৎসক এবং নার্সসহ আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীগণ জীবন বাজি রেখে করোনা যুদ্ধের সম্মুখ সারিতে অবতীর্ণ হন। এই বীর সেনাদের পাশে দাঁড়ানোর নিমিত্তে মহামারির শুরুতেই দেশ-বিদেশের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সমন্বয়ে ‘সহযোদ্ধা’ নামে একটি সংগঠণ গড়ে তুলি। এই সংগঠনের মাধ্যমে নিজেদের ব্যক্তিগত অনুদানের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের অনেকের নিকট থেকে অনুদান সংগ্রহ করে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামাদি বিভিন্ন হাসপাতালে পৌঁছে দিতে সচেষ্ট হই। দিন গড়ানোর সাথে সাথে একদিকে করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকে, অন্যদিকে স্বাস্থ্যখাতের ভঙ্গুরতা এবং ক্ষতগুলো ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফলে মানুষের মধ্যে করোনার আতঙ্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, চিকিৎসক এবং নার্সদেরকে ভাড়া-বাড়ি থেকে উৎখাত করার মতো ঘটনা ঘটে। এমনকি, সন্তান কর্তৃক করোনা আক্রান্ত মাকে জঙ্গলে রেখে আসার ঘটনাও ঘটে। আবার অপ্রতুল চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যখাতের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে হাসপাতাল থেকে করোনা রোগী পালানোর মতো ঘটনাও দেখা যায়। পাশাপাশি হাসপাতালে শয্যার সংকটে মানুষ এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটতে ছুটতে অনেকে রাস্তায়ই মারা যায়। অক্সিজেনসহ চিকিৎসা সামগ্রীর সংকট এত প্রকট আকার ধারণ করে যে, অনেক ধনী ব্যক্তিও অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। এমতাবস্থায়, বিবেকের তাড়নায় করোনা মোকাবেলায় সম্মুখ সারির সৈনিকদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাতের ক্ষত নিরাময়ের লক্ষ্যে লেখায় মনোনিবেশ করি। গবেষণা সহযোগী মোঃ সিরাজুল ইসলাম মিলনের সহযোগিতায় প্রথমে লকডাউনের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব মূল্যায়ন করি যা দৈনিক ‘প্রথম আলো’ এবং ‘আমাদের সময়’সহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। পরবর্তীকালে পর্যায়ক্রমে করোনা মোকাবেলার নানা দিক, স্বাস্থ্যখাত পরিবর্তনে করণীয় নির্ধারণ, অর্থনৈতিক মুক্তি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ইত্যাদি বিষয়ে লিখতে থাকি, যার বেশিরভাগই দৈনিক ‘প্রথম আলো’র মতামত কলামে প্রকাশিত হয়। সেসব লেখাই এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। সমসাময়িক পরিস্থিতির আলোকে পত্রিকায় প্রকাশিত বক্ষ্যমাণ নিবন্ধগুলো একদিকে ঐতিহাসিকভাবে মূল্যবান, অন্যদিকে স্বাস্থ্যখাতের সার্বিক ব্যবস্থাপনা, অর্থায়ন, মানবসম্পদের উন্নয়ন এবং গবেষণার মানোন্নয়নের উপায়সমূহ সহজে বর্ণনার প্রয়াস নেয়া হয়েছে। এই গ্রন্থের প্রত্যেকটি লেখা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত, সাবলীল এবং পাঠকবান্ধব। অধিকন্তু, প্রত্যেকটি লেখা ব্যতিক্রমধর্মী, স্বতন্ত্র ও বাস্তবধর্মী উপসংহারে সমৃদ্ধ। পাঠকদের সুবিধার জন্য নিবন্ধগুলোকে ৪টি অংশে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমভাগে রয়েছে স্বাস্থ্যখাতের পরিবর্তনে করণীয় সংক্রান্ত লেখনী; দ্বিতীয় ভাগে করোনা মোকাবেলায় করণীয়; তৃতীয় ভাগে করোনাকালীন অর্থনীতি ও শিক্ষাখাতের পরিবর্তনে করণীয়সহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি এবং শেষভাগে ‘প্রথম আলো’-য় প্রকাশিত আমার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার। আশা করা যায়, নীতিনির্ধারণী মহল ও স্বাস্থ্যখাতের গবেষকদের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, উন্নয়ন অধ্যয়ন ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ আলোচ্য গ্রন্থ থেকে উপকৃত হবেন। এই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত অধিকাংশ নিবন্ধ দৈনিক ‘প্রথম আলো’র মতামত কলামে প্রকাশের জন্য এ কে এম জাকারিয়া এবং সম্পাদকমন্ডলীর অন্যান্য সদস্যের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। নিবন্ধসমূহ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর উৎসাহদাতা সহকর্মী এবং বন্ধুবান্ধবসহ সকলের প্রতিও অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। তাছাড়া, আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সহধর্মিণী শারমিন আরা, ছোটো বোন জিন্নাত আরা এবং সন্তানদ্বয় মাহীর ও শাহীর-এর প্রতি, যারা এই গ্রন্থ লিখতে আমাকে নিরন্তর উৎসাহ ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেছে। আমি নিবন্ধসমূহের সমালোচকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাই। গবেষণা সহযোগীসহ গ্রন্থের আঙ্গিক বিন্যাস ও সংশোধনে সহায়তাকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বাংলা একাডেমির মুহাম্মদ রাসেলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, যিনি এই গ্রন্থ প্রকাশের জন্য সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেছেন। আরও কৃতজ্ঞ বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. কুতুব আজাদের প্রতি যিনি এই গ্রন্থটির সমগ্র পাণ্ডুলিপি এডিট করে পাঠযোগ্য করে তুলেছেন। গ্রন্থটিতে কোনো ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য পাঠককুলকে অনুরোধ জানাই। এই গ্রন্থ থেকে আহরিত জ্ঞান দেশের মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হলে নিজেকে ধন্য মনে করব। অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয় ফেব্রুয়ারি ২০২২
Tk.
400
336
Tk.
300
225
Tk.
125
112
Tk.
300
225
Tk.
250
188
Tk.
70
67
Tk. 290
Tk.
120
72
Tk.
350
315
Tk.
240
168