বাংলা ভাষায় চিন্তামূলক রচনার পরিসর ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। বিশেষত একাডেমিক পরিসরে বাংলাভাষী অঞ্চলে এমন পণ্ডিতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, যাঁরা মনে করেন, বাংলায় বিদ্যায়তনিক রচনা অসম্ভব না হলেও দুরূহ, আর অনেক ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনীয়। সাধারণভাবে দুনিয়ার হালচাল এবং বাংলাভাষী অঞ্চলগুলোর রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতির সাথে এ বাস্তবতার গভীর সম্পর্ক আছে। তত্ত্বতালাশের একাধিক সম্পাদকীয় ও প্রবন্ধে আমরা এ বিষয়ে আলোকপাত করেছি। এখানে কেবল পরিভাষা সম্পর্কে কয়েকটি মন্তব্য করতে চাই। শাস্ত্রীয় চর্চা মূলত পরিভাষার চর্চা। এ বিষয়ে বাংলাভাষী অঞ্চলে এমনকি বিদ্বজ্জনের মধ্যেও বেশ কতকটা অস্পষ্টতা দেখা যায়। তার মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, ভাষার সাথে পরিভাষাকে গুলিয়ে ফেলা। পরিভাষার যোগ ডিসিপ্লিনের সাথে, ভাষা-বিশেষের সাথে নয়। কিন্তু সাধারণভাবে আমাদের অঞ্চলে বিপরীত চিন্তাই প্রবলতর। ‘বাংলা পরিভাষা’ কথাটার জোর চল সে বাস্তবতার সাক্ষ্য বহন করছে। উনিশ-বিশ শতকে বিশ্রুত বাঙালি পণ্ডিতগণ বাংলা পরিভাষা প্রণয়নের ব্যাপারটিকে যে এতটা গুরুতর করে তুলেছিলেন, তার কারণ অনুধাবন করা অবশ্য খুব দুরূহ নয়। কলোনিয়াল অভিজ্ঞতার কারণে এবং জ্ঞান-উৎপাদনে খুব প্রান্তীয় অবস্থানের কারণে আমাদের এখানে জ্ঞানচর্চার ব্যাপারটা বিশুদ্ধ অনুবাদমূলকতায় পর্যবসিত হয়েছিল। পশ্চিমা জ্ঞানকে বাংলায় পুনরুৎপাদিত করাই ছিল জ্ঞানচর্চার পরম লক্ষ্য। এ চর্চার নগদ ফল আমরা যথেষ্ট পেয়েছি। কিন্তু এর নানা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির দিকও আমাদের বহন করতে হচ্ছে। বিজ্ঞানচর্চার কথাই ধরা যাক। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানী ও মনীষীদের অনেকেই বাংলাভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় আগ্রহী ছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ বাংলায় লিখেছেনও। কিন্তু একটু সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে, তাঁরা যা করেছেন তা মূলত বাংলায় বিজ্ঞানরস পরিবেশন করা, অর্থাৎ বাংলায় বিজ্ঞান-সাহিত্য করা—বিজ্ঞানচর্চা নয়। যাকে বিজ্ঞানচর্চা বলা যায়, বাংলা ভাষায় তা সম্ভব বলে তাঁরা হয়ত দূরতম অনুমানেও ভাবতেন না, যেমন এখনো ভাবা হয় না; কাজেই বিজ্ঞান-সাহিত্যই ছিল তাঁদের কাছে বাংলাভাষীদের জন্য পরম নিয়তি। সচেতন বা অচেতনভাবে উপনিবেশিত মন নিশ্চয়ই এ ধরনের সামষ্টিক ধ্যান-ধারণার অন্যতম উৎস।
Tk.
180
126
Tk.
350
263
Tk.
200
136
Tk.
60
48