স্বাধীনতা তথা বিজয়ের পঞ্চাশ বছরপূর্তী পেরিয়ে এসেছি। আমি সৌভাগ্যবান এবং একই সাথে গর্বিত এই কারণে যে, আমি মহান মুক্তিযুদ্ধকালে তথা একাত্তরের একজন কিশোর নাগরিক। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি; স্বাধীনতা দেখেছি। যুদ্ধকালীন সময়ে এক ক্ষুদ্র সাক্ষী। পরাধীনতার শৃখল কেটে স্বাধীনতাকামী কৈশোর লালিত স্বপ্নে প্লাবিত এক স্বপ্নধারী। ষাটোধ বয়সে পেরিয়ে এসে আজ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী শেষে সেদিনের ছোট ছোট গুরুত্বহীন স্মৃতি ও স্মৃতি কথাগুলো কেন যে কোন পরশে নক্ষত্র হয়ে উঠেছে আমার মনের আকাশে, তা বুঝে উঠতে পারিনি। কিশোর চোখে দেখা সেদিনের অবুঝ ঘটনাগুলো আজ পৌড়ঙ্গে এসে যেন এক ধরণের বোধের তাড়নায় তাড়িত করছে আমাকে। ভাবনার কোন প্রবাহ থেকে নয়তো গ্রন্থিত স্মৃতির গহিন থেকে কে যেন বলছে আমায় ‘কথা গুলো রেখে যাও-সময়ের কাছে, মানুষের কাছে আজকের কোন কিশোরের কাছে। সেই অনুভবের অনুভূতি থেকেই ‘নয় মাসের দশ গল্প’ শিরোনামে ঘটনাগুলো গল্প আকারে প্রকাশে আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। আমরা জানি, আমাদের হাজার বছরের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাসে ‘একাত্তর’ একটি চুড়ান্ত পর্বকাল। এখানে দাঁড়িয়ে আমরা প্রথম উচ্ছারণ করতে পেরেছি, আমরা স্বাধীন। এটি আমার রাষ্ট্র-এটি আমার পতাকা। কৈশোরের ঐ সবুজ কালের অবুঝ মনে দেখা ঘটনাগুলো যে মুক্তিযুদ্ধেও মহাকাব্য সাগরে এক একটি গুরুত্বহীন ছাপ মা ত্র, সে বিষয়ে আমার সন্দেহ নেই। আমি শুধু চেয়েছি সহজ করে সরল কথাগুলো বলে যেতে। আমি জানি, ঘটনাগুলোকে গল্প আকারে সার্থক রূপ দিতে পারিনি, চেষ্টাও করিনি। স্মৃতি কথা বললেও তা বোধ করি যর্থাত সঠিক বলা হবে না। কারণ যে, চঞ্চল কিশোর চোখে আমি ঘটনাগুলো দেখেছিলাম বা পর্যবেক্ষণ করেছিলাম, সে মতে আজ বলতে পারা সম্ভব নয়। বয়সের ভার এবং অভিজ্ঞতার সঞ্চয় দুয়ে মিলে তার ভিন্ন রূপ সৃষ্টি করেছে। যেখানে কৈশোর নেই। কিশোর কালের সেই আমিও নেই। তাই ঘটনাকাল থেকে অনেক দূরে বসে আজ স্থান, কাল, পাত্র যথাস্থানে রেখে শুধু মাত্র ঘটনার বর্ণনা করার চেষ্টা করে গেছি। গল্পে যে সাহিত্য রস গুন একেবারেই অনুপস্থিত তাতে আমার সন্দেহ নেই। এবং গল্পের নায়ক নায়িকা সৃষ্টির কোনও অবকাশও রাখতে পারিনি বা চাইনি। নিতান্তই সাদা-মাটা গোছের পারিবারিক বলয়ে অরিপক্ষ কিছু স্মৃতিচারণ মাত্র। সাহিত্য রস যোগে গল্পগুলো আরও সুখপাঠ্য করে তোলার অপারগতা আমার নয়। বরং গল্পে কলোর না বাড়িয়ে না কমিয়ে ঘটনার বাস্তবতা ও সত্যতা ধরে রাখার চেষ্টাটুকু প্রাধান্য পেয়েছে গল্পগুলোর রচনা আঙ্গিকে। পাঠক কুলের কাছে আমি বিশ্বাস ও ভরসা নিয়ে আশা করতে চাই যে, গল্পগুলোকে শুধু গল্প না ভেবে একাত্তরে আমার কিশোর চোখে দেখা ঘটনাগুলোর স্মৃতিচারণ বিবেচনায় নেবেন। জানি ঘটনাগুলো ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও সাহিত্য বিচারে কোনও উল্লোখযোগ্যতা বহন করবে না। তবুও মহান মুক্তিযুদ্ধও কালে বিশাল পাথারে- ক্ষুদ্র এক বিন্দু জল কনা হয়ে যদি স্থান করে নিতে পারে, তাতেই আমার সার্থকতা। আর সফলতার ভার বয়ে গেল সম্মানীত পাঠককুলের হাতে। পাঠের আঙ্গিনাই আমার গন্ত্যবের শেষ সীমানা।
Tk.
450
338
Tk.
350
263
Tk.
250
188
Tk.
300
225
Tk.
160
120
Tk.
170
152
Tk.
120
108
Tk.
100
75
Tk.
267
200