প্রকৃতির অফুরন্ত উপাদান মাটি। মানুষের প্রথম দিককার উদ্ভাবন ও সৃজন প্রক্রিয়ার অন্যতম বিকাশ মৃৎশিল্প। এই তত্ত্বের প্রমাণ মেলে বিশ্বের প্রধান সভ্যতাসমূহের প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের সময় পাওয়া মৃৎশিল্পের নিদর্শনসমূহে। মাটির অন্যতম প্রধান উপাদান জলীয় পদার্থ নিয়মিত তাপ (Heat) দিয়ে অনার্দ্রকরণ ও নমনীয়তা দূর করে যে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটানো হলো, তার ফলেই বিকাশ হলো মৃৎশিল্পের। প্রত্নতত্ত্বিবিদ ও নৃতত্ত্ববিদদের মতে মানব সমাজের প্রথম বা আদি মৃৎশিল্পী নারী। কৃষকের ঘরের মেয়েরা এই মৃৎশিল্প নির্মাণে প্রধান ভূমিকা পালন করে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে অনুকুল প্রাকৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র ধারায় চাকে গড়া, হাতে ও ছাঁচে গড়া মৃৎশিল্পের বিকাশ ঘটেছে। মিশরে সর্বপ্রথম প্রায় তিন হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মৃৎশিল্পীর চাকা আবিস্কৃত হয়। আদিকালের মৃৎশিল্প স্বাভাবতই প্রথমে কৃষিপূর্ব যুগে গাছের লতায় বোনা ঝুড়ি, নানা রকমের বল্কলপাত্র,বেতের ঝুরি, কাঠপাত্র ও পাথরপাত্রের অনুকরণে গড়ে উঠে। পরে ধীরে ধীরে উপাদানের ব্যবহার ও প্রয়োগরীতির ক্রমোন্নতির ফলে মৃৎশিল্পের বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পায়। কৃষি প্রধান অর্থনীতির দৃঢ় প্রতিষ্ঠা ও ক্রমোন্নতির ফলে মৃৎশিল্পের আঙ্গিক, নক্সা ও কারুকুশলতারও উন্নতি হয় এবং মৃৎশিল্প বংশগত পারদর্শিতা নির্ভর বিশিষ্ট কারুশিল্পে পরিণত হয়। বিশেষ ধরণের মাটি, উচ্চতর কৌশল ও দক্ষতা দিয়ে এই মৃন্ময় সৌন্দর্যকে অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। পোড়ামাটির ফলক দু’ভাবে তৈরি হতো- কাদামাটি থেকে সরাসরি হাতে তৈরি এবং ছাঁচের সাহায্যে। মূল ফলকগুলো হাতে কুঁদে তৈরি করতেন মৃৎশিল্পীগণ এবং স্থাপত্যের গাত্রালঙ্কার হিসেবে প্রচুর পরিমাণ বিভিন্ন আকারের ফলকের প্রয়োজন হতো। সে জন্য মূল স্থাপত্য নির্মাণের সময় থেকেই ছাঁচে ফেলে চমৎকার সব কারুকাজ সমৃদ্ধ হাজার হাজার ফলকও তৈরি করা শুরু হতো। ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে স্থাপত্যের গাত্রালঙ্কার হিসেবে পোড়ামাটির ফলকের ব্যবহার শুরু হয়েছে দেখতে পাওয়া যায়। উদাহরণ স্বরূপ মহাস্থানগড়ে (পুন্ড্রবর্ধন) অবস্থিত বাসু বিহার, গোবিন্দ ভিটা, পলাশ বাড়ি, ট্যাংরা প্রভৃতি প্রত্নস্থানে প্রাপ্ত পোড়ামাটির ফলকের উল্লেখ করা যেতে পারে। যদিও এগুলোর আকার মধ্যযুগের ফলকের চেয়ে বেশ বড় এবং পুরু। পোড়ামাটির ভাস্কর্য ও ফলক নির্মাণের কৌশলগত দিকটি নিয়ে পরবর্তী সময়ে আলোতপাত করা হবে। পোড়ামাটির ফলক প্রস্তুত করতে মৃৎশিল্পীগণ সম্ভবত তাদের সমকালে বিশেষ ধরণের উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করতেন। যে জন্য এখন পর্যন্ত পোড়ামাটির ভাস্কর্যসমৃদ্ধ স্থাপত্যসমূহ এদেশের জল-হাওয়ায় নিজেদেরকে রক্ষা করতে পেরেছে।
Tk.
735
551
Tk.
600
492
Tk.
130
98
Tk.
180
148
Tk.
160
88
Tk.
90
68
Tk.
165
145
Tk.
390
351
Tk.
250
205
Tk.
200
150