+880 1521-203767
(Whatsapp,
Imo,
Viber)
তত্ত্বতালাশ প্রকাশ করতে গিয়ে আমরা আরো পরিষ্কারভাবে বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় সিরিয়াস লেখালেখির সংকট বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি। আগের বিভিন্ন সম্পাদকীয়তে এ সংকটের উৎস হিসাবে আমরা প্রধানত দুটি কারণের উল্লেখ করেছি। এক. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলায় পড়াশোনার কোনো কার্যকর বন্দোবস্ত না থাকা। দুই. নিও-লিবারেল জমানায় প্রত্যক্ষ ‘মুনাফা’ ব্যতীত কোনো পরিশ্রম করার ব্যাপারে মনস্তাত্ত্বিক অনীহা। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ার প্রবল প্রতাপ,সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিতি ইত্যাদি তো আছেই। আজ এ বিষয়ে অন্য এক বিবেচনার উল্লেখ করতে চাই। সাধারণভাবে একাডেমিক লেখাপত্রে একটা পরোক্ষতা থাকে,এবং একটা কাঠামোগত ছক বা ছাঁচের মধ্যে জরুরি লেখা সম্পন্ন করা যায়। বিশেষত ইংরেজি ভাষার একাডেমিয়ার মতো বৈশ্বিক এবং কাঠামোবদ্ধ এলাকায় ব্যক্তিগত বোধ-বোধি এবং অনুভূতির বিশেষ সঞ্চার না-ঘটিয়েই এটা করা সম্ভব। বলা দরকার,ঘটনাটা ঘটে নির্দিষ্ট ডিসিপ্লিনারি একাডেমিক সমাজের মধ্যে,কোনো বিশেষ জনসমাজের সাথে সংশ্লিষ্ট না থেকেই। এ কথা বাংলা ভাষার একাডেমিক লেখাপত্রের ক্ষেত্রে অত জোর দিয়ে যে বলছি না,তার একমাত্র কারণ,এখানে আদৌ সে অর্থে একাডেমিক সমাজ প্রতিষ্ঠিতই হয়নি; কাজেই ছক বা ছাঁচেরও বেজায় গলতি আছে। তবু,কেউ যদি এমনকি কলা বা সমাজবিজ্ঞানের একাডেমিক পত্রিকাগুলোতে একবার উঁকি দিয়ে দেখেন,তাহলেই বুঝতে পারবেন,বাইরের জগতে মোটেই কল্কে পাওয়ার মতো নয়,এমন দেদার লেখা স্রেফ কাঠামোকে পুঁজি করে এসব পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। আমরা তত্ত্বতালাশে যে ধরনের লেখা চাই,এবং যে ধরনের লেখা প্রচুর লিখিত হওয়া দরকার বলে প্রচার করি,সেগুলোর ধরন বেশ কতকটা ভিন্ন। শাস্ত্রীয় সূক্ষ্মতা ও পরিভাষাগত সতর্কতা চাইলেও আদতে লেখায় আমরা আরো দুটো জিনিস প্রত্যাশা করি—জনগোষ্ঠীর যাপিত জীবনের প্রত্যক্ষতা এবং তত্ত্বজ্ঞানের উপলব্ধিগত সততা। এ বস্তু কাঠামোগত প্রবন্ধ-উৎপাদন-প্রক্রিয়ায় সম্ভব নয়। প্রশ্ন হল,এ ধরনের লেখার উৎপাদন,অন্তত বাংলায়,এত বিরল হয়ে উঠল কেন? দুটো কারণের কথা আগেই বলেছি। এখানে আরেকটির উল্লেখ করতে চাই,যদিও চূড়ান্ত বিচারে আগের দুটি থেকে তা পুরোপুরি আলাদা নয়। বাংলা গদ্যে তত্ত্বচর্চার বড় প্রবাহটা শুরু হয়েছিল উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে। এর প্রধান লক্ষণ ছিল পশ্চিমকে বাংলায় অনুবাদ করে স্থানীয় সক্ষম জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করে তোলা। পুরো ব্যাপারটার সাথে অন্তত শিক্ষিত-নাগরিক জনগোষ্ঠীর যাপিত জীবনের একটা প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ছিল,কারণ,প্রক্রিয়াটা ছিল আদতে কলোনাইজেশনের অংশ। একই সাথে এটা ‘আধুনিকায়নে’র প্রক্রিয়াও ছিল,আর সেদিক থেকে জনগোষ্ঠীকে ‘আধুনিক’ করে তোলার প্রকল্পের সাথে এর কোনো বিরোধ ছিল না। স্থানীয় ভাষায় তত্ত্ব ও চিন্তামূলকতার চর্চার দ্বিতীয় ধাপ আমরা দেখি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-সংগ্রামে ও মন-মানসিকতায়—তা সে কলকাতার বাঙালি জাতীয়তাবাদ বা সর্বভারতীয় কংগ্রেসি ও পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ,বা পরের ঢাকাকেন্দ্রিক বাঙালি জাতীয়তাবাদ—যাই হোক না কেন। জাতীয়তাবাদকে পশ্চিমা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বা নৈতিকতার নিরিখে বুঝতে এবং এখানে জনসংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে তা আমল করতে খুব একটা বেগ পেতে হয় নাই। কারণ,বিপুল জনগণের দিক থেকে তার রাজনৈতিক ও নৈতিক জরুরত ছিল। তৃতীয় ধারাটি নিঃসন্দেহে ধ্রুপদি মার্কসবাদী ঘরানা,যেখানে পশ্চিমা জ্ঞান পার্টিলাইন ও অন্য নানাবিধ সক্রিয়তায় এক ধরনের দেশজ চর্চার ভিত্তিভূমি পেয়েছিল। লক্ষণীয়,মার্কসবাদী ধারার বাংলা তত্ত্বসাহিত্য ধ্রুপদি মার্কসবাদকে যতটা আত্তীকরণ করেছে,নব্য মার্কসবাদী স্কুলগুলোকে তার পাইর পাইও করে নাই,যদিও এসব ঘরানার বয়সও রীতিমতো শতবর্ষ হতে চলল। তবে সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। উনিশশ ষাটের দশক থেকে প্রধানত ক্রিটিক্যাল স্কুলগুলোতে এবং ভাষিক অর্থের অনির্দিষ্টতাকে ভিত্তি করে হওয়া চর্চাগুলোতে সার্বিকভাবে যে তত্ত্বকাঠামো বিকশিত হয়েছে,তার ধরন প্রায় সম্পূর্ণ ভিন্ন। খুব সরল করে এবং সংকীর্ণ করে ফেলার ঝুঁকি নিয়ে বলা যায়,আগের চর্চা ছিল অনুমোদনমূলক এবং ‘একক সত্য’-নির্ভর। পর্যালোচনামূলক এবং বহু-সত্যের দাবিদার পরবর্তী চর্চার তুলনায় পূর্বতন চর্চা খুবই আলাদা। তদুপরি,কিছু নৈরাজ্যবাদী চর্চা বাদ দিলে পরের ধাপের তত্ত্বচর্চার ভিত্তিতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাথে সম্পর্কিত রাজনীতিরও খুব একটা বিকাশ ঘটেনি। আমাদের দেশে এ ধরনের চর্চা লক্ষণীয়ভাবে কম। ফলে নতুন ভাষা ও পরিভাষার বাংলাকরণ খুব একটা হয়ে ওঠেনি,যাপিত জীবনের সাথে যুক্ত হওয়া তো অনেক দূরের কথা। কিন্তু নতুন যুগের তত্ত্ব ও চিন্তাধারা নতুন পরিস্থিতির জীবনযাপন থেকেই উদ্ভূত। কাজেই একে কোনো হাওয়াই চিজ ভাবার কারণ নাই। এসব বোঝাবুঝির অভাব ব্যক্তি ও সামষ্টিক জীবনের গভীরতর ও কার্যকর বোঝাবুঝিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। মুশকিল হল,বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিসিপ্লিনারি চর্চার সিলসিলা ব্যতীত বাংলাভাষীদের জীবন ও ভাষায় এগুলোর ব্যবহারযোগ্য ভাষ্য রচিত হওয়ার অবকাশ খুবই সামান্য। ডিসিপ্লিনারি চর্চার মধ্য দিয়ে প্রথমে পরিভাষা ও পরে সামগ্রিক ভাষায় ধারণাগুলোর সঞ্চার ঘটে,এবং পরিশেষে জনগোষ্ঠীর সার্বিক জীবনযাপনের সঙ্গী হয়ে ওঠে। তাতে সমাজে এমন লোকের আমদানি বাড়ে,যারা জনগোষ্ঠীর জীবনের সাথে সম্পর্কিত ইস্যুগুলোর প্রয়োজনীয় আলাপে নতুন সঞ্চারিত-সঞ্চিত ভাষা-ব্যবহারে কুশলী হয়ে উঠবেন। তার আগে পর্যন্ত ‘প্রবন্ধে’র ভাষায় এসব চিন্তা ও পদ্ধতির অনূদিত হওয়ার সম্ভাবনা কমই থাকবে। কাজেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত ঘরানার লেখাপত্র উৎপাদনে সাহসী ও আগ্রহী মানুষের অভাব হওয়া মোটেই বিচিত্র নয়। বাংলাদেশে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য সম্ভবত আমাদের আরো বেশ অনেকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
Tk.
700
525
Tk.
520
390
Tk.
330
248
Tk.
260
236
Tk.
200
150
Tk.
100
80
Tk.
500
375
Tk.
140
87
Tk.
175
158
Tk.
250
205